" করোনা " থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা ------স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ভবিষ্যতের আক্রমণ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রথম পদক্ষেপ হলো বায়োটেকনোলজি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ফোকাস ।



" করোনা " থেকে প্রাপ্ত  শিক্ষা ------স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ভবিষ্যতের আক্রমণ এর  বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রথম পদক্ষেপ  হলো বায়োটেকনোলজি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ফোকাস  । ------শ্রী প্রদীপ কুমার রায়। 
Image Credit : Google
রাজা পরিক্ষিতের কথা মনে আছে? নিজের মৃত্যুর কথা আগাম জেনেছিলেন। কাহিনীটি ছিল এক ঋষি পুত্র শাপ দিয়েছিলেন তাকে। সাতদিনের মধ্যে তার মৃত্যু হবে তক্ষক নাগের কামড়ের কারণে। তাই তিনি নিজেকে গৃহবন্দি করেছিলেন সাতদিনের জন্য। চরম কড়া নিরাপত্তার পরেও তার মৃত্যু হয়েছিল । কারণটা জানা আছে? তিনি নিয়ম ভঙ্গ করেছিলেন। অচেনা সাধুদের বিশ্বাস করে। আর তাদের পাঠানো ফলের মধ্যেই লুকিয়েছিল তোক্ষকনাগ। নিজের সাথে কোথাও মিল খুঁজে পাচ্ছেন কি? আমরাও এক অদৃশ্য শত্রুর বিরুধ্যে নিজেদের বাঁচা মরার লড়াই করছি গৃহবন্দি হয়ে। এই নিয়ম ভঙ্গ করলে কিন্তু আমরাও পরীক্ষিত হতে চলেছি। কে বলতে পারে আপনার পরিচিত মানুষটি তার অজান্তেই আপনার মৃত্যুদূত হয়ে আপনার সংস্পর্শে আসতে চাইছে কি না? পরিক্ষিতের হাতে সাতদিন ছিল । আমাদের হাতে 14 দিন । তক্ষক এর মতোই করোনাও প্রাণপন চেষ্টা করবে আমাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য প্রতিবেশী রূপে কখনো বা বন্ধু রূপে। তাই এই 14 দিন দরজা বন্ধ রাখুন। মনে রাখবেন করোনা কিন্তু নিজের রূপে নয় মানুষের রূপ নিয়েই আসবে। জয় আমাদের হবেই। শুধু 14 দিনের অপেক্ষমাত্র।

সচেতনতা আর শৃঙ্খলা অটুট থাক । ভাইরাস শৃঙ্খলটা টুটে যাক । ব্রেক দ্য চেইন । দৈহিক দূরত্ব বাড়ুক । ঘুচে যাক মানসিক দূরত্ব । চলুন, এই বেলা মানুষের থেকে সরে দাঁড়াই । সরে দাঁড়াই, আসলে মানুষের পাশে থাকার জন্যই । নইলে মানুষের বড় বিপদ !আমাদের দেশ সহ সারাবিশ্ব তথা আমাদের ও সারাবিশ্বের মানুষের এই মহা দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে সবাই ঘরেই থাকুন। খুব বেশি জরুরী না হলে ঘর থেকে বের না হওয়াই সর্বোত্তম উপায়। নিজ এবং নিজের পরিবারের স্বার্থে, এবং সর্বোপরি মানুষের কল্যাণের জন্য—,ঘরে থাকুন। নিজে বাঁচুন, অন্যকে বাঁচতে সহায়ক হোন। চীন জানতে পারেনি "করোনার" থাবা এমন হতে হতে পারে। এজন্য চীনকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। ইটালী ভেবেছিল চীন অনেক দুরে, এখানে কিছুই হবে না। আমেরিকা ভেবেছিল আমরা পরাশক্তিধর , কে রুখবে আমাদের?

অনেকদিন আগে এক দরিদ্র দেশে ফ্লু এর মহামারী দেখা দিয়েছিল। সেই দেশটি বহু বছর লুটেরাদের দখলে ছিল, মাত্র কিছুদিন আগে মুক্তি পেয়েছিল। তাদের না ছিল ডাক্তার, না ওষুধ, না হাসপাতাল,কিছুই ছিল না। প্রতিদিন মানুষ মরছে, বুড়ো-বুড়ি ,তরুণ-শিশু,কেউ বাদ যাচ্ছে না। সেই দেশের নেতা ইউরোপ আর আমেরিকার সব দেশের কাছে ডাক্তার নার্স ওষুধ সাহায্য চাইলেন। ইউরোপীয়রা কোন সাড়াই দেয় নি। লাতিন আমেরিকার দু-একটা দেশ সাধ্যমত সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিল। তারপর মহা পরাক্রমশালী প্রতিবেশী দেশের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সেই দেশ এগিয়ে চললো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতে সর্ব্বোচ্চ বিনিয়োজের মাধ্যমে। দেশটা খুবই দ্রুত নিরক্ষরতার অভিশাপ মুক্ত হলো, শত শত ডাক্তার নার্স দেশ সেবায় ঝাঁপিয়ে পড়লো। তারপর সেই দেশটার নেতা ঠিক করলেন, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি আয়ত্ত্বে আনতে হবে - মানুষ বাঁচানোর প্রযুক্তি, মানুষ মারার প্রযুক্তি নয়। সব বাধা উপেক্ষা করে দেশটা বায়োটেকনোলজি আর জেনেটিক্সে দুর্দান্ত অগ্রগতি অর্জন করলো। মেনিনজাইটিস এর টীকা উদ্ভাবন করলো,তারা লাং ক্যান্সার এর চিকিৎসাতেও দারুণ সফল, ভাইরোলজিতে ও ইন্টারফেরন আল্ফা ২বি উদ্ভাবন করেছে। বর্তমানে নতুন নেতারা ঐ দেশের হাল ধরেছেন কিন্তু নীতির পরিবর্তন হয় নি। তারপর বিশ্বজুড়ে কোরোনা ভাইরাসের মহামারি। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী আর ধনী দেশগুলি যখন বাঁচার উপায় খুঁজে বেড়াচ্ছে, তখন সেই ছোট্ট দেশটি এগিয়ে এসেছে ওষুধ নিয়ে। যে ইউরোপ একদিন তাদের মহাবিপদে ফিরেও তাকায় নি, সেই ইউরোপ আজ এই ছোট্ট দেশটির ওষুধের আশায় দিন গুনছে। এই ছোট্ট দেশটা ওষুধের পেটেন্ট করলেই বিশাল ব্যবসা করতে পারতো, কিন্তু  করে নি। মানুষের স্বাস্থ্য ব্যবসার ক্ষেত্র নয় - এটাই তাদের নীতি। এই দেশের নাম কিউবা, সেই নেতার নাম ফিদেল কাস্ত্রো।

Image Credit : Google
কোনো মহামারী রুখতে  টিকা তৈরী করতে বা কোনো অজানা রোগের  ওষুধ  তৈরী করতে বা কোনো রোগ নির্ণয়ে ডায়াগনস্টিক কিট বা  ইনস্ট্রুমেন্ট তৈরী করতে  বর্তমানে আমাদের দেশের বা রাজ্যের উচিত ওই কিউবা বা অন্যন্য দেশের মতো  বায়োটেকনোলজি আর জেনেটিক্সে দুর্দান্ত অগ্রগতি অর্জন করা , তার কারন  এই কোবিদ - ১৯ আমাদের দিকে  আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে ডাক্তার , নার্স  বা উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা দ্বারা কোনো মহামারী বা জীবাণুর প্রাদুর্ভাব বা সংক্ৰমণ রোখা  খুবই কঠিন , যদি না উপযুক্ত টিকা , কিট বা সংক্রমন  নির্ণায়ক  যন্ত্রাংশ , ওষুধ  ইত্যাদি   উপলব্ধ থাকে। তাই অবিলম্বে বায়োটেকনোলজি , জেনেটিক্সে ইত্যাদি বিষয়ে উন্নত করার প্রয়াসে এই সমস্ত শাখা সমূহের ছাত্র ও শিক্ষকদের বিভিন্ন রিসার্চ কার্য্যে উৎসাহিত করা ও প্রেরণা দেওয়া উচিত। যেখানে  ডাক্তাররা অসহায়  সেখানে এরাই পারে মানুষের পাশে মানুষের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করতে আর সমগ্র বিশ্বের কাছে  উপযুক্ত টিকা , কিট বা সংক্রমন নির্ণায়ক  যন্ত্রাংশ , ওষুধ  প্রভৃতি  উপলব্ধ  করতে। 

বর্তমানে বায়ো কেমিস্ট্রি , বায়ো ফিজিক্স , বায়ো মেডিকেল , এনভার্নমেন্ট সায়েন্স , ফুড টেকনোলজি ,নেনো টেকনোলজি , ফার্মাকোলজি  ইত্যাদি সমস্ত বিষয়ের সমন্বয়ে গঠিত বায়োটেকনোলজি  ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স  এ শিক্ষিত ছাত্র দেশের জন্য খুবই প্রয়োজন , তার কারন এটাই এখন আমাদের দেশকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।  এই মুহূর্তে প্রাচীন আয়ুর্বেদ ব্যবস্থা বা হোমিওপ্যাথ ওষুধের উপর  নির্ভরতা বা চিরাচরিত এলোপ্যাথিক  ডায়গনস্টিকের  ব্যবস্থার  উপর নজর  না দিয়ে , সমস্ত ফোকাস বায়োটেকনোলজি ইঞ্জিনিয়ারিংএর উপর রাখতে হবে,যাতে আমরা খুব দ্রুত আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি এবং বিশ্বকে সঠিক পথের দিশা দিতে পারি। এই প্রসঙ্গে এটা মনে রাখতে হবে যে আমাদের দেশে কয়েকটি নামমাত্র ইনস্টিটিউটেই কেবল বায়োটেকনোলজি ইঞ্জিনিয়ারিং এর উচ্চ শিক্ষা দেওয়া হয়ে থাকে। প্রথাগত শিক্ষা যথা বি এস সি , এম এস সি  ইত্যাদি ডিসিপ্লিনে বায়োটেকনোলজি অনেক ইনস্টিটিউটেই  পড়ানো হয়ে থাকে, কিন্তু এখানে কেবল তত্বের দিকটাকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়ে থাকে কিন্তু এপ্লিকেশন এর দিকটা অন্ধকারেই থাকে। তাই অবিলম্বে বায়োটেকনোলজি ইঞ্জিনিয়ারিং এর উচ্চ শিক্ষা দেওয়ার  উপর ফোকাস করতে হবে এবং এখনো যে কয়টি ছাত্র ওই বিষয়ে অধ্যয়ন করেছে বা করছে তাদেরকে নজরে নিতে হবে যাতে করে তারা তাদের জ্ঞান বিকাশে সমর্থ হয় এবং পরিশেষে যেন তারা সমাজের তথা রাজ্যের তথা দেশের তথা বিশ্বের মানুষের কল্যানে কাজ করতে পারে তাদের যথোপযুক্ত উৎভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কিট , টিকা , ডায়গনষ্টিক ইনস্ট্রুমেন্ট , ওষুধ  ইত্যাদি আবিষ্কারের মাধ্যমে। এক লক্ষ ডাক্তার যা করবে একজন গবেষক তার থেকে অনেক বেশি মানুষের কল্যানে আসবে তাদের নব নব সুচিন্তিত উদ্ভাবন বা নব নব আবিষ্কারের মাধ্যমে। 
Image Credit : Google
দুঃখ-কষ্ট মানুষকে সঠিক পথ চেনায়। অন্ধকার আছে বলে আলোর গুরুত্ব বুঝতে পারি। ঠিক তেমনি, সুখের প্রবাহে ভাসতে ভাসতে আমরা পথের খেই হারিয়ে ফেলি। মাঝে মাঝে দুঃখ এসে আমাদের সঠিক পথ চিনিয়ে দেয়। এই মুহুর্ত্বে সঠিক নির্নয় করতে হবে যাতে আমাদের এই  অসহায় পরিস্তিতির মধ্যে  আবার  না পড়তে হয়। টানা ৪ দিন ডিউটি করার পর দিল্লীর এক ডাক্তার তাঁর পরিবারের সাথে দেখা করতে এসেছেন। হাতে সময় খুব  কম , হাসপাতালে রোগীর ভীড় ক্রমশ চওড়া হচ্ছে। অগত্যা বাড়ীর বাইরে বসেই চা খেতে খেতে পরিবারের সাথে দেখা করলেন, সংক্রমণের আশঙ্কায় কাছেও গেলেন না। আপনাদের মতো ডাক্তারদের অসংখ্য ধন্যবাদ  যারা করোনা রোগীদের চিকিৎসা করছেন ৷ কিন্তু এঁরা খুবই অসহায় কারন এই মহামারী  রোগের প্রতিষেধক বা ওষুধের কথা তাদের জানা নেই। তারা এর প্রতিকার হিসাবে কেবল প্রচলিত ওষুধের কম্বিনেশন করে চিকিৎসা করার প্রয়াস জারি রাখছেন এবং এর  ফলে কেউ কেউ হয়তো সুস্থ হচ্ছেন কিন্তু এটা কেউ গ্যারান্টি দিয়ে  বলতে পারছেন না যে ওই ওষুধের প্রভাবেই এই রোগ প্রতিরোগ সম্ভব হয়েছিল নাকি ওই অসুস্থ ব্যক্তিটির ইমিউনিটি সিস্টেম রোগ সংক্ৰমণ করতে বাধার সৃষ্টির ফলে সুস্থ  হয়েছিলেন। যারা শুধু প্রাইভেট চেম্বার করেন  তারা (বেশিরভাগ , বিশেষ করে গ্রাম ও মফস্বল শহরের চিকিৎসক কুল) এখন করোনার ভয়ে সব বন্ধ করে দিয়ে হসপিটালে গিয়ে চিকিৎসার দোহাই দিচ্ছেনা আর বলে দিচ্ছেন যে তাঁরা এখন নিজ সিদ্ধান্তে হোম কোয়ারান্টিনে আছেন ৷ চিকিৎসকদের সাথে দয়া করে ভগবান বা সৈন্যবাহিনীর তুলনা করবেন না। এতে ভগবানের বা সেনাদের অপমান করা হয়। যে সব উপরতলার চিকিৎসক এবং আমলারা নীতি নির্ধারণ করেন, তাদেরকে বলছি যে, বুঝতে পারছেন কি যে সত্যই , আজ একবিংশ শতাব্দীর সম্মুখে দাঁড়িয়েও ডাক্তাররা  কত অসহায়, যদি না কোনো গবেষক ডায়গনস্টিক কিট  , যন্ত্রাংশ,প্রতিষেধক টিকা বা ওষুধের উদ্ভাবন করে  তাদের হাতে  দেন ! তাই বলছি , এই সত্য যদি আমরা হৃদয়ে গেঁথে নিই যে  আমরা ভবিষ্যৎ দেখতে পাই না , তাহলে অবিলম্বে  আমাদের ভবিষ্যৎ নির্মাণ করতে হবে বর্তমানের  সঠিক পদক্ষেপের দ্বারা আর সেই পদক্ষেপের প্রথম ধাপই হচ্ছে বায়োটেকনোলজি ইঞ্জিনিয়ারিং এর মতো বিষয়ে  উচ্চ শিক্ষা দেওয়ার  উপর ফোকাস। 

এই বিষয়ে কোনো তর্ক  বা বিতর্কে না গিয়ে বা কোনো বিষয়কে গুরুত্বহীন না ভেবে শুধুমাত্র বর্তমানে বিশ্বের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বর্তমানের স্বাস্থ্য বিষয়ে আশু  চাহিদার  দিকে লক্ষ্য রেখে আমি এই বিষয়ে  সমস্ত রাজ্য সরকার,কেন্দ্রীয়  সরকার এবং আপামর দেশবাসীর নিকট এই বিষয়ে আলোকপাত করলাম । এই লেখনীর সমস্ত দায় আমার  এবং এই লেখনী কাউকে গুরুত্বপূর্ণ বা কাউকে গুরুত্বহীন অথবা সমালোচনা করার প্রয়াসে নয় , এটি কেবল আমার নিজস্ব মতামত।  পরিশেষে বলব যে সমস্ত বিষয় ও সমস্ত বিভাগই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু কিছু কিছু বিষয় অধিকতর  গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে সমাজের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ( ডিম্যান্ড অফ দ্যা  সিচুয়েশন  )।
Image Credit : Google





















Comments

Popular posts from this blog

করোনার প্রেক্ষিতে সনাতনী আচার যা অসম্ভব রকমের বিজ্ঞানভিত্তিক অভ্যাস ।