করোনার প্রেক্ষিতে সনাতনী আচার যা অসম্ভব রকমের বিজ্ঞানভিত্তিক অভ্যাস ।
ইমেজ ক্রেডিটঃ ফেসবুক
আজ থেকে বেশ কিছু দশক পিছিয়ে গেলে, যখন ভ্যাকসিন বা অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার হয়নি, তখন বেশিরভাগ সময়ই মৃত্যুর কারন ছিল জীবাণু সংক্রমণ। সেটা ব্যাকটিরিয়া বা ভাইরাস যা কিছু হতে পারে। সেটাকে আটকাতে, তখন থেকে যে সনাতনী আচার চলে এসেছে তা ছিল অসম্ভব রকমের বিজ্ঞানভিত্তিক প্র্যাকটিস।
১. মৃত দেহ পুড়িয়ে ফেলা। সাথে ব্যক্তির লেপ তোষক, ব্যবহার করা পোশাকের। জীবাণু সংক্রমণের চান্স কমিয়ে ফেলা।
২. অশৌচ। বাড়ীর লোকজনকে আলাদা করে রাখা। এমন খাবার খেতে হয়, যেটার জন্য বাজারে যাবার প্রয়োজন নেই। ভাত, চিড়ে, ঘী, দই এইসব।
৩. মালসায় রান্না, কলাপাতায় ভোজন। বাসন মজার দরকার নেই। বাজার ও পুকুর থেকে দূরত্ব রাখা।
৪. চুল দড়ি না কাটা। তখন সেফটি রেজর ছিল না। নাপিতের দোকান থেকে দূরে রাখা যেন দোকানের ক্ষুর বা কাঁচি থেকে জীবাণু না ছড়ায়।
ইমেজ ক্রেডিটঃ ফেসবুক
৫. লোকে বাড়ীতে এসে ভুজ্যি দিয়ে যেত। যেন বাজারে না যেতে হয়। যাঁরা আসতেন তাঁদের বাড়ী ফিরে ভালো করে স্নান করে তারপর বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হত। এটাও সংক্রমণের থেকে দূরে রাখার সুকৌশল।
৬. আত্মীয় স্বজনের অশৌচের ড্রেস কোড। যেন অপরিচিত কেউ দেখলেও বুঝে ফেলে ও দূরত্ব রাখে। কারন ছুঁয়ে ফেললেও চান করতে হবে।
৭. অশৌচের ব্যাপ্তি। সাধারনত ১৩ দিন, বাড়ী থেকে স্বাভাবিক ভাবে জীবাণুর বিলুপ্তির আশা। এই কারণেই অপঘাতে মৃত্যু হলে ৩ দিন অশৌচের সময়। কারন অপঘাতে মৃত্যুর কারণ জীবাণু নয়।
এখন আমাদের গ্লোবাল অশৌচের সময়। যাকে আমরা সোশ্যাল ডিস্টান্সিং বলছি আরকি! এই গ্লোবালাইজেশনের যুগে, সবাই সবার আত্মীয় হয়। এ যেন ইতালীতে কেউ মারা গেলে ভারতে তার অশৌচ পালন করতে হচ্ছে।
এই কঠিন সময়ে যারা ইচ্ছে করে জমায়েত করছেন, এরা শুধু আমাদের দেশের নয়, গোটা পৃথিবীর শত্রু।
ইমেজ ক্রেডিটঃ ফেসবুক
পূর্ব-পুরুষদের রীতিনীতি-
১) শৌচালয় এবং স্নানঘর বাড়ীর বাইরে উঠোনে বানানো হতো ।
২ ) কেন চুল কাটার পর, বা কোনো মৃতদেহ সৎকার করে ঘরে ফেরার পর বাইরেই স্নান করে ঘরে ঢুকতে হতো বিনা কোনো ব্যক্তি বা বস্তুকে স্পর্শ না করে । কেন স্নানের পর আগুন স্পর্শ করার নিয়ম ছিলো ।
৩) কেন চপ্পল বা জুতো বাইরে রাখা হতো, কেন বাইরের জুতো পড়ে ঘরে প্রবেশ নিষেধ ছিলো ।
৪) কেন বাইরে থেকে এসে ঘরে প্রবেশের সময় বালতিতে রাখা জল দিয়ে হাত - পা ধুয়ে ঘরে প্রবেশ করার নিয়ম ছিলো ।
৫) কেন জন্ম বা মৃত্যুর পর পরিবার দশ বা তের দিন যে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে যেতো না ।
৬) কেন মৃত ব্যক্তি এবং দাহ - সৎকারকারী ব্যক্তির বস্ত্র শ্মশানেই ত্যাগ করার নিয়ম ছিলো ।
৭ ) কেন রান্না করার পূর্বে স্নান করা জরুরী ছিলো ।
৮ ) কেন কোনো বাড়ীতে মৃত্যু হলো ভোজন প্রস্তুত করা বারণ ছিলো ।
৯ ) কেন প্রাতঃকালে স্নান করে ঘরে ধূপ, কর্পূর, ঘন্টা, শঙ্খ বাজানোর নিয়ম ছিলো ।
১০ ) কেন স্নান করার পর কোনো অশুদ্ধ ব্যক্তি বা বস্তুর সংস্পর্শে আসা বারণ ছিলো ।
আমরা আমাদের পূর্বপুরুষের দ্বারা তৈরী নিয়মের অমর্যাদা করেছি দীর্ঘকাল, আর পশ্চিমী প্রথার অনুসরণ বা অনুকরণ করছি । আজ করোনা ভাইরাস আমাদের সেই সংস্কারের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে ॥ জ্ঞান এবং পরম্পরা চিরকাল সমৃদ্ধ ।
ইমেজ ক্রেডিটঃ ফেসবুক
Comments
Post a Comment